সকাল ৮ টা ১০ মিনিট। অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার পর রাজধানীর মধ্যে বাড্ডা এসে দেখি অফিসগামী অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সেই লাইনে যোগ হলাম আমিও। দাঁড়িয়ে আছি ১ ঘণ্টা। এদিকে ১০ টায় অফিস ধরার চিন্তা তো আছেই।

রিকশাওয়ালাও ভাড়া চায় দ্বিগুণ। আমাদের স্বল্প বেতনের চাকরি, এতো ভাড়া দিয়ে রোজ অফিসে যাওয়া সম্ভব নয়। অফিস খোলা, গণপরিবহন বন্ধ কেন? মাসের শেষে সব টাকা যদি যাতায়াতের পেছনে খরচ করে ফেলি আমাদের সংসার চলবে কীভাবে? এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথাগুলো বলছিলেন অফিসগামী আসিফ মোস্তাফিজ। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সোমবার (২৮ জুন) থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের লকডাউন।

সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। কিন্তু খোলা রয়েছে শিল্পকারখানা এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত। যে কারণে সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ। গণপরিবহন সংকটে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন মানুষ। রিকশা এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা চললেও ভাড়া হাঁকছে দ্বিগুণ-তিনগুণ।

এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অনেকে বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওনা দিচ্ছেন অফিসে। একটি পত্রিকা অফিসে চাকরি করেন আশরাফি দিবা। রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন মতিঝিলের উদ্দেশ্যে। না হেঁটেই উপায় কী! যেখানে তার রোজ অফিসে যেতে ভাড়া লাগে ৩০ টাকা, সেখানে সিএনজি ভাড়া চায় সাড়ে চারশো টাকা। বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন তিনি।

অফিসগামী ফয়সাল মাহমুদ বলেন, লকডাউনও দিয়েছে, অফিসও খোলা রেখেছে কিন্তু গাড়ি বন্ধ করে রেখেছে। তাহলে মানুষ অফিসে যাবে কীভাবে। উড়ে উড়ে নাকি। সব সময় দুর্ভোগে কেন সাধারণ মানুষকেই পড়তে হয়? তারা এক সমস্যা সমাধান করতে যেয়ে আরও দশটা সমস্যার সৃষ্টি করে।

নির্দিষ্ট সময়ে অফিস ধরতে না পারলে চাকরি থাকবে না, কিন্তু সময় মতো অফিস ধরার কোনো ব্যবস্থাও করবে না। তাহলে আমরা করবো কী? আর এক অফিসগামী নিশি খাতুন বলেন, যেখানে বেতন পাই ১০ টাকা, সেখানে রাস্তায় দিতে হচ্ছে ২০ টাকা। তাহলে কীভাবে চলবো আমরা।

গাড়ি বন্ধ রেখে, অফিস খোলা রেখেছে। একটা মেয়ে সন্ধ্যায় গাড়ি না পেয়ে কীভাবে বাসায় ফিরবে সে চিন্তা করেছে কেউ? একদিকে যেমন মহামারী থেকে জীবন বাঁচানোর চিন্তা, অন্যদিকে জীবিকা নির্বাহের চিন্তা। এই জীবন আর জীবিকার দৌঁড়ে হাঁপিয়ে উঠছে নিম্নআয়ের মানুষ।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চলমান বিধি নিষেধের মধ্যেই ২২ জুন থেকে ঢাকার আশপাশের সাতটি জেলায় নয়দিনের বিশেষ লকডাউন শুরু হয়। এরইমধ্যে গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে- যেখানে আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কিছু শর্তাবলী সংযুক্ত করে ২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে থেকে ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।